জকিগঞ্জে নিহত আ.লীগ নেতার দাফন, পরিবারের দাবী খুনে জড়িত ২০ জন

আল হাছিব তাপাদার:: চাচাতো ভাইদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত জকিগঞ্জের বারহাল ইউনিয়নের নিজগ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মুমিনের (৩৫) দাফন মঙ্গলবার সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। জানাযায় উপস্থিত হয়ে এলাকার হাজারো জনতা খুনিদের ফাঁসির দাবী জানিয়েছেন।

জানাযার নামাজ শেষে জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাক সরকার নিহতের পরিবারের লোকজনকে শান্তনা দিয়ে বলেন, কোন অবস্থাতেই আসামীরা রেহাই পাবেনা। হত্যায় জড়িত সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি নিহতের স্ত্রী সেলিনা বেগমের কাছ থেকে মৌখিকভাবে জবানবন্দিও গ্রহন করেছেন। এ সময় জকিগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত মুমিন ইসলামসহ কয়েকজন এসআই উপস্থিত ছিলেন।

নিহত মুমিনের স্ত্রী সেলিনা বেগমের দাবী, মৃত্যুর আগে তার স্বামী হামলায় জড়িত অন্য সন্ত্রাসীদের নাম বলেছেন। তিনি মোবাইলে রেকর্ড করে রেখেছেন। মুমিন হত্যায় জড়িত রয়েছেন অন্তত ২০ জন। সকল আসামীদের বিরুদ্ধে তিনি হত্যা মামলা দায়ের করবেন। হামলার ঘটনায় গত ২১ মার্চ জকিগঞ্জ থানায় তিনি বাদী হয়ে ২০ জনকে আসামী করে অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামী রেখে পুলিশ মামলা রেকর্ড করে বলে তার দাবী।

হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, মুমিনের সাথে চাচাতো ভাই কাওসার আহমদদের বাড়ীর সীমানা নিয়ে বিরোধ ছিলো। পরে ভাগবাটোয়ারা করে নিজ নিজ জায়গা আলাদা করা হলেও বাড়ীর পুকুর থেকে যায় সকলের। সম্প্রতি সময়ে কাওসার ও তার বাবা আব্দুল জলিল বাড়ীর রাস্তার পুকুর পাড়ে একটি ল্যাট্রিন তৈরী করেন। এতে রাস্তায় প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টি হয় এবং ল্যাট্রিনের ময়লা পুকুরে পড়ে। এ ল্যাট্রিনটি সরাতে কাওসার ও তার বাবাকে মুমিনের ভাই আবু আহমদ তাগিদ দিলে তারা গত ৯ মার্চ আবুকে মারধর করে আহত করে। এ ঘটনায় মুমিন বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ১৮ মার্চ পুলিশ মামলাটি রেকর্ডভূক্ত করে। সেলিনা

এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে খাবার খাওয়ার পর তার স্বামী মুমিন আহমদের মোবাইলে একটি কল আসে। মুমিন মোবাইলে কথা বলতে বলতে গ্রামের চৌকিদার হারিছ আলীর বাড়ীর কাছে যাওয়া মাত্র কাওসার আহমদের নির্দেশে অজ্ঞাতরা হামলা চালায়। সেলিনা বেগম স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে খুনিদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে আইন শৃংখলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

গত ২০ মার্চ রাতে মুমিনকে তার চাচাতো ভাই কাওসারসহ কয়েকজন মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে মুমিনকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় প্রেরণ করেন। প্রায় ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মুমিনের অবুঝ দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। নিহতের শরীরে ২৮ টি ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে বলে ময়না তদন্তের পর এক প্রতিবেদনে শাহবাগ থানার এসআই তরিকুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন।

জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার জানান, হামলার ঘটনায় মুমিনের স্ত্রী ৭জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা করেছেন আগে। দায়েরকৃত এ মামলার সাথে হত্যার ধারা যোগ করা হবে। হত্যায় ২০ জন জড়িত এমন কথা নিহতের পরিবার আমাকে জানায়নি। যদি নিহত মুমিন মৃত্যুর আগে বলে থাকে আর তথ্য প্রমান পাওয়া যায় তাহলে এ ঘটনায় যতজন জড়িত থাকবে সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমিও চাই নিহতের পরিবার ন্যায় বিচার পাক। হামলার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মামলা দায়েরের পরপর দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাক সরকার জানান, নিহতের স্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন এ ঘটনায় ১৮/২০ জন জড়িত। হত্যার সাথে জড়িত সবাইকে পুলিশ আইনের আওতায় আনবে। কোনভাইবেই আসামীরা রেহাই পাবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর